বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মানসিক রোগে আক্রান্ত, গত তিন বছর ধরে মায়ের দেহ আগলে রেখেছেন শুভব্রত

News Sundarban.com :
এপ্রিল ৬, ২০১৮
news-image

গত তিন বছর ধরে মায়ের দেহ আগলে রেখেছেন শুভব্রত ৷ রাসায়নিক প্রয়োগে মৃতদেহ সংরক্ষণের প্রক্রিয়াকে বলা হয় ক্রায়ো প্রিজারভেশন৷  মৃতদেহ সংরক্ষণ নিয়ে অনেক পড়াশোনাই করেছিলেন শুভব্রত ৷ তার বাড়িতে এসংক্রান্ত নানারকম বইও পাওয়া গিয়েছে ৷
সিনেমাকেও হার মানাবে শুভব্রতর কাহিনি ৷ প্রায় তিন বছর ধরে বাড়িতে মায়ের মৃতদেহ আগলে ধরে রেখেছিল সে ৷ বাড়িতে একটি ফ্রিজারে মায়ের দেহ রেখে দিয়েছিল ৷ কিন্তু কেন সে এমনটা করেছিল ? মায়ের প্রতি ভালবাসা থেকেই ? নাকি এর পিছনে ছিল অন্য কোনও কারণ ? পুলিশের অনুমান, পেনশন তুলতেই মৃত মায়ের টিপ সই নিত শুভব্রত ৷ মৃত্যুর পরেও যাতে নিয়মিত মায়ের পেনশন পাওয়া যায়, তার জন্যই দেহ সংরক্ষণ করে ফ্রিজারে ঢুকিয়ে রেখেছিল সে ৷
স্কিৎজোফ্রেনিয়ার মতো মানসিক রোগে আক্রান্ত শুভব্রত ৷ ক্রনিক নন, এফেকটিভ সাইকোসিসে আক্রান্ত তিনি ৷ এমনটাই মত ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রিকের বিভাগীয় প্রধান ডা. প্রদীপ সাহার ৷ চিকিৎসকদের মতে, মানসিক রোগে আক্রান্ত না হলে এমন কাজ করা কারোর পক্ষে সম্ভব নয় ৷
৫০ হাজার টাকা পেনশন পেতেন মা ৷ তাঁর মৃত্যুর পরও নিয়মিত পেনশন তুলে গিয়েছে ছেলে শুভব্রত ৷ বেকার ছেলে ঘরে বসে বসে ৫০ হাজার টাকা আদায়ের লোভ সামলাতে পারেনি ৷ সেকারণেই কি মায়ের মৃতদেহ গত প্রায় তিন বছর ধরে আগলে রেখেছিল সে ? এবিষয় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ জারি রেখেছে ৷

এফসিআইয়ের প্রাক্তন কর্মী বীণা মজুমদার প্রায় তিন বছর আগে বেহালার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। তাঁর স্বামী গোপালচন্দ্র মজুমদারও ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার আধিকারিক ছিলেন। স্ত্রী-র মৃত্যুর পর আর সৎকার করেননি। ৯০ বছর বয়সী গোপালচন্দ্রবাবুর কথাতেও অসংলগ্নতা ধরা পড়ে। তাঁর বিশ্বাস ছিল, ছেলেই স্ত্রীকে বাঁচাবেন।

মরা মানুষকে জীবিত করার গবেষণা বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই হচ্ছে ৷ সেটা জানতেন শুভব্রত ৷ এ সংক্রান্ত নানা বইও তিনি সংগ্রহ করেছিলেন ৷শুভব্রতর বাড়ি থেকে একাধিক দেশি-বিদেশি মেডিক্যাল জার্নাল উদ্ধার হয়েছে। এছাড়াও, ইন্টারনেটে এই ব্যাপারে দীর্ঘ পড়াশুনা করেছিলেন শুভব্রত। গতকাল গ্রেফতারের পর এদিনও তাঁকে জেরা করা হয়। তাঁর মেডিক্যাল টেস্টও করা হয়েছে। শুভব্রতকে জেরা করতে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের সাহায্য চেয়েছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হয় বাবা গোপাল মজুমদারকেও।