শ্রীদেবীকে বিদায় জানাতে গিয়ে হাসছিলেন জ্যাকুলিন, চলছে সমালোচনা
চোখের জলে প্রিয় অভিনেত্রী শ্রীদেবীকে বিদায় জানিয়েছেন অগণিত ভক্ত। শেষ যাত্রায় সবাইকে কাঁদিয়ে গেছেন বলিউডের প্রথম ‘ফিমেল সুপারস্টার’।
গত বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মুম্বাইয়ের সেলিব্রেশন স্পোর্টস ক্লাবে তার মরদেহ রাখা হয়। সেখানেই হাজির হয়েছিলেন শ্রীদেবীর স্বজন, কাছের মানুষ, ভক্ত ও আরও অনেকে।
ওইদিন শ্রীদেবীকে বিদায় জানাতে গিয়েছিলেন আরেক বলিউড তারকা জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজও। সেখানেই বেঁধেছে এক জটলা।
এনডিটিভি বলছে, শ্রীদেবীর মরদেহের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে ক্যামেরায় হাসি-হাসি মুখ করা অবস্থায় ধরা পড়েছেন জ্যাকুলিন। এ নিয়েই এখন সমালোচনার চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।
এই ঘটনার পর কেউ লিখেছেন, জ্যাকুলিন কি ভুলে গিয়েছিলেন তিনি কারও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতে গিয়েছেন? এমন ভাবে হাসছিলেন যেন কোনও অ্যাওয়ার্ড শো-তে গিয়েছেন!
যদি সত্যিই খারাপ না লেগে থাকে তাহলে শুধুমাত্র নিয়ম রক্ষা করার জন্য যাওয়ার দরকার কী- এমন প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে। আবার কেউ লিখেছেন, শ্রীদেবীকে শ্রদ্ধা না করতে পারলে শুধুমাত্র মিডিয়া কভারেজের জন্য কি গিয়েছিলেন?
তবে এখনও পর্যন্ত এসবের কোনও উত্তর দেননি জ্যাকুলিন।
ছোট মেয়ে খুশী কাপুর এবং স্বামী বনি কাপুরের সঙ্গে শ্রীদেবী দুবাই গিয়েছিলেন এক বিয়ের অনুষ্ঠানে। গত শনিবার রাতে সেখানকার একটি হোটেলে ৫৪ বছর বয়সে মারা যান তিনি।
শ্রীদেবীর পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দুবাইয়ের জুমেইরাহ ইমিরেটস টাওয়ারস হোটেলের একটি কক্ষে ছিলেন শ্রীদেবী-বনি। বনি কাপুর আগেই দুবাই থেকে মুম্বাই চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু শ্রীদেবীকে চমকে দিতে তিনি আবার শনিবার দুবাই যান। রাতের খাবারের জন্য শ্রীদেবীকে প্রস্তুত হতে বলেন বনি কাপুর। এসময় শ্রীদেবী বাথরুমে যান।
দীর্ঘ সময় পরও শ্রীদেবী বের না হলে বনি তাকে ডাকেন। কোনো সাড়া না মিললে বনি দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। তিনি ভেতরে গিয়ে শ্রীদেবীকে পানিভর্তি বাথটবে নিথর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।
সঙ্গে সঙ্গে তিনি তার এক বন্ধুকে ডাকেন। শ্রীদেবীকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক জানান, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।
তার এমন মৃত্যুতে গোটা পরিবার শোকে বিহ্বল হয়ে পড়ে। বনি কাপুরের ছোট ভাই সঞ্জয় কাপুর জানিয়েছেন, শ্রীদেবীর হৃদরোগের কোন লক্ষণ ছিল না।
পরে ময়নাতদন্তের বরাত দিয়ে দুবাই পুলিশ জানায়, বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীদেবীর মৃত্যু হয়েছে বাথটাবের জলে দম আটকে।
শ্রীদেবীর রক্তের নমুনায় পাওয়া গেছে অ্যালকোহলও। তবে সব কিছু খতিয়ে দেখে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন- এটি দুর্ঘটনাই, এর পিছনে অন্য কিছু নেই।
দুবাই থেকে শ্রীদেবীর মরদেহ ভারতে নেওয়ার পর গত বুধবার সকাল থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মুম্বাইয়ের সেলিব্রেশন স্পোর্টস ক্লাবে তা রাখা হয় বলে আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়।
সেখান থেকে শ্রীদেবীর শববাহী গাড়ি দুপুর ২টা ২৬ মিনিটে তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রওনা হয় ভিলে পার্ল শ্মশানের দিকে। সেখানেই সন্ধ্যা সোয় ৫টার দিকে শ্রীদেবীর শেষকৃত্যের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
‘লমহে’ ছবির শুটিং-এর সময়ই শ্রীদেবী ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তার মৃত্যুর পর যেন সব কিছুই যেন সাদা কাপড়ে মুড়ে ফেলা হয়। নায়িকার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাই সব কিছুই সাজানো হয়েছিল তার প্রিয় রং সাদায়।
সাদা ফুল দিয়ে সাজানোর পাশাপাশি শ্রীদেবী-র বাংলো ‘ভাগ্য’ও মুড়ে ফেলা হয়েছিল সাদা কাপড়ে। অন্ত্যেষ্টিয়াতেও সকলকে অনুরোধ করা হয়েছিল সাদা পোশাকে আসতে। সেই মতো প্রায় সব বলিউড তারকাকেই এ দিন দেখা গেছে সাদা পোশাকে লোখণ্ডওয়ালার সেলিব্রেশন স্পোর্টস ক্লাবে।
শ্রীদেবীকে ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র নারী সুপারষ্টার বলা হয়। ‘সাদমা’, ‘লামহে’, ‘মি. ইন্ডিয়া’, ‘চাঁদনি’, ‘হিম্মতওয়ালা’- ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য শ্রীদেবী এখনও স্মরনীয় হয়ে আছেন। শুধু হিন্দি নয়, গুণী এই অভিনেত্রী তামিল, তেলেগু এবং কন্নড় ছবিতেও সমান সাফল্য পেয়েছেন।
বনি কাপুরের সঙ্গে বিয়ের ১৫ বছর পর ২০১২ সালে শ্রীদেবী ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ ছবিটি দিয়ে আবারও বলিউডে প্রত্যাবর্তন করেন। ছবিটি যথেষ্ট প্রশংশিত হয়। তার অভিনীত ‘মম’ ছবিটিও দর্শকনন্দিত হয়েছে।