শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সুন্দরবনের প্রত্যন্ত দ্বীপে শিক্ষার অালো প্রসারিত করতে উদ্যোগ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের

News Sundarban.com :
ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৮
news-image

সুভাষ চন্দ্র দাশ :

ডাঙায় বাঘ,জলে কুমীরের সাথে নিয়মিত লড়াই করে যাঁদের কে বাঁচার জন্য লড়াই করতে হয় সেই দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার প্রত্যন্ত সুন্দরবনের দাপুটে ভয়াল ভয়ংঙ্কর হানা নদীর তীরে সুন্দরবনের গোপালকাটা ও জেলেপাড়া।শোনা যায় অনেক দিন অাগে গোপাল জেলে নামক এক ব্যাক্তিকে বাঘে আক্রমণ করে।আত্মরক্ষার জন্য গোপাল বাবুর কাছে থাকা ধারালো দা দিয়ে সুন্দরবনের হিংস্র রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার কে কুপিয়ে ছিলেন।পরে বাঘ আক্রমণের রণে ভঙ্গদিয়ে জঙ্গলে পালিয়ে গিয়ে প্রাণে বাঁচে।সেই থেকেই গোসাবা ব্লকের হানা নদীর তীরে গ্রামটির নাম হয় গোপালকাটা এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামে মৎস্যজীবিদের বসবাস হওয়ায় নাম হয় জেলেপাড়া।তখন এই এলাকায় মানুষের বসবাস খুবই নগন্য। তারপর গড়ে ওঠে একটি হাইস্কুল।স্বাধীনতার পর অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া জঙ্গল লাগোয়া গ্রামে ১৯৬৯ সালে সুন্দরবনের জেলেপাড়া ও গোপালকাটা গ্রামের বাসিন্দা পশুপতি থানদার,শ্রীমত্যা সুন্দরী বালা,খগেন্দ্র নাথ থানদার,গণপতি থানদার,অধীর চন্দ্র মন্ডল,রবীন্দ্র নাথ সাঁফুই রা মিলিত ভাবে দুএকর পাঁচ কাঠা জমি দান করেন এলাকায় একটি হাইস্কুল গড়ে তোলার জন্য।প্রায় ৩০০ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে অবশেষে দুটি গ্রামের মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে ওঠে একটি জুনিয়র হাইস্কুল।১৯৬৯ সালে ২৯ মার্চ শুরু হয় স্কুলের পঠন-পাঠনের কাজ শুরু হয় প্রায় ৫০০ছাত্রছাত্রী নিয়ে।পরের বছর সরকারী অনুমোদন পায় এবং ছাত্রছাত্রী সংখ্যা বেড়ে প্রায় একহাজার হয়।১৯৯১সালে উন্নিত হয়ে হাইস্কুল হয়। এরপর শিক্ষক ও কিছু মানুষের অনৈতিক কর্ম কান্ডের এবং স্বার্থসিদ্ধির জন্য ছাত্রছাত্রী প্রচুর কমে যায়।বর্তমানে ৪৭৫ ছাত্র-ছাত্রী।শিক্ষক,ছাত্র-ছাত্রী,ও অভিভাভকদের সমন্বয় এবং তার সাথে সুষম সম্পর্ক স্থাপনই  গোপালকাটা জেলেপাড়া হাইস্কুলের মান উন্নয়ন বলে মনে করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মহীতোষ দাস।
বিদ্যালয়ের কাজ কর্ম ঠিক ভাবে চললেও কয়েকজন শিক্ষক ও স্থানীয় কয়েকজন বিদ্যালয়ের উন্নয়ণের পরিবর্তে স্কুল কে আরো বেশীকরে নদীগর্ভে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে সুন্দরবন জঙ্গল লাগোয়া মানুষদের কে শিক্ষার পরিবর্তে অাঁধারের পথে ঠেলে ফেলে দেয়।পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালের ২৯ মার্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন এবং পরে ২০১৫ সালে ১৪ নভেম্বর গোপালকাটা জেলেপাড়া হাইস্কুলের  ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ভার গ্রহন করেন শিক্ষক মহীতোষ দাস।প্রত্যন্ত এই দুর্গম এলাকায় ভালো না লাগলেও তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের করুণ দুর্দশা দেখে নিজেকে উদ্বুদ্ধ করে অন্ধকারাচ্ছন্ন গোপালকাটা জেলেপাড়া হাইস্কুলকে আলোর পথ দেখানোর চেষ্টা করতে থাকে।সেই চেষ্টার পথে বারে বারে বিভিন্ন ভাবে অায়লা ঝড়ের মতো দাপট দেখিয়ে নিজেদের কর্তৃত্ব কায়েম করার জন্য মহীতোষ বাবুর উপর আক্রমণ শুরু হয়।তবে মহীতোষ বাবু হাল ছাড়ার পাত্র নন।তিনি জানেন কিভাবে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে হয়।মহীতোষবাবু আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন বিদ্যালয় কে মিলিতভাবে কিছু মানুষ নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য শেষ করে দিয়েছে।মহীতোষবাবুর কথা যে সঠিক তা অভিভাবকরা স্বীকার করে বলেন আসি যাই মাইনে পাই ভাবে স্কুল চলতো।কিন্তু মহীতোষ বাবু আসার পর থেকে বিদ্যালয়ের অামূল পরিবর্তন হয়।স্কুলের বিল্ডিং,মাঠ,শৌচালয় এমন কি বাৎসরিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান সহ সব কিছুরই ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে।অনেক ছাত্রছাত্রী বই না কিনতে পেরে মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু মহীতোষ বাবু ক্যানিংয়ের বেশ কয়েকজন যুবকের সাথে যুক্ত হয়ে প্রচুর পাঠ্য পুস্তক এনে অভাবের তাড়নায়  স্কুল ছেড়ে দেওয়া অসংখ্য ছাত্রছাত্রীকে স্কুলে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। এমন নিঃশব্দ বিপ্লব অাজও করে চলেছেন শিক্ষক মহীতোষ দাস। এমন শিক্ষক বিদ্যালয়ে থাকলে দারিদ্রতার অভাবে পড়া বন্ধ হবে না বলে একবাক্যে স্বীকারও করেছেন অভিভাবক মহল। মতো একজন শিক্ষক থাকতে ছাত্রদের পড়াশোনা বন্ধ হবে।এটা হতে পারে না।এমন মাতৃসুলভ কাজ একমাত্র মহীতোষ বাবুর পক্ষেই সম্ভব।জানা গেছে এখনো বিদ্যালয়ের বিল্ডিংয়ের  অবস্থা খুবই খারাপ সরকারী সাহায্যের জন্য ভারপ্রাপ্ত পর্ধান শিক্ষক অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন।
সহকারী শিক্ষক জয়ন্ত মন্ডল বলেন “বিদ্যালয়ের উন্নয়ণ পূর্বের তুলনায় অনেক বেশী হয়েছে এবং বিদ্যালয়ের কোন মাঠ ছিলনা মহীতোষ বাবুর অক্লান্ত পরিশ্রমে বিশাল বড় মাঠ পেয়ে ছাত্রছাত্রী,অভিভাবক মহল যথেষ্ট খুশি। তবে বিদ্যালয়ে আরো কয়েকটি বিল্ডিং হলে ভালো হয়”।
অন্যদিকে বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির সভাপতি নরেন্দ্র নাথ ভুঁইয়া ও বিশিষ্ট সমাজসেবী সুবিদ আলি ঢালি বলেন “মহীতোষ বাবু বিদ্যালয়ে আসার দিন থেকেই নানান উন্নয়ণ মূলক কাজের জন্য এলাকায় প্রিয় শিক্ষকের মর্যাদা পেয়ে আসছেন। আমরা ওঁনার মতো এমন নির্ভিক শিক্ষক পেয়ে গর্বিত অানন্দিত এবং আশা করবো আগামী দিনে উনি বিদ্যালয়ের আরো উন্নতি করে উচ্চতার শিখরে নিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। ”
মহীতোষ বাবু বলেন“সাফল্যের উৎকর্ষতা সবসময়ই ভালো,কিন্তু ধরে রাখাটা খুবই কঠিন।একমাত্র সুশিক্ষায় শিশু,কিশোর ও কিশোরীদের যেমন চেতনার আলো জ্বালিয়ে তাদের মধ্যে এনে দেয় সংযম ও বিকাশিত জীবন। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে আমরা আমাদের সন্তানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে আমাদের দেশের সত্যিকারের নাগরিক করে তুলি। সেই কঠিন কাজটা চেষ্টা করেছি নানান সমস্যার মধ্য দিয়ে। এখনও পর্যন্ত মিডডে মিলের ষ্টোররুম,ডায়নিং রুম,নেই। নেই সাইকেল রাখার গ্যারেজ,মিডডে মিলের রান্না ঘরের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। তিনি আরো বলেন গোপালকাটা জেলেপাড়া হাইস্কুল কে উচ্চতার শিখরে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ছাত্রছাত্রী বাদ দিয়ে শিক্ষক শিক্ষিকা ও সরকার অনুমোদিত বিদ্যালয় পরিচালন সমিতি মিলিয়ে ২২জন সদস্যের এই পরিবার স্কুলের কাজে সহযোগিতা করে চলেছেন।তাই প্রতিদিনই “অন্তরমম বিকশিত করো——,এই হৃদয় সে নীলাচল,কাশী,মথুরা,বৃন্দাবন—-–,
হে ভারত,ভুলিও না নীচ জাতি,মূর্খ,দরিদ্র,অঞ্জ—হে আমার তরুন জীবনের দল তোমারাই তো দেশে দেশে মুক্তির—,আমার মাথা তোমার নত করে দাও হে তোমার চরণধূলার তলে———।