শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ইজতেমায় অংশ নিবেন না মাওলানা সাদ, ফিরবেন দিল্লি

News Sundarban.com :
জানুয়ারি ১২, ২০১৮
news-image
এম এ আহাদ শাহীন:
ভারতের তাবলিগ জামাতের মুরব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলভী বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেবেন না। তিনি সুবিধামতো সময়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন এবং এই সময়ে তিনি কাকরাইল মসজিদেই অবস্থান করবেন। তিনি সুবিধা মতো সময়ে ভারতে চলে যাবেন।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে তাবলিগ জামাতের বিবাদমান দুটি পক্ষের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে এসব সিদ্ধান্তের কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা যথাসময়ে হবে। শান্তিপূর্ণভাবে হবে। যাদের নিয়ে বিতর্ক ছিল তাদের নিয়ে একটা সমঝোতায় তাঁরা এসেছেন। তিনি বলেন, মাওলানা সাদ সুবিধামতো সময় বাংলাদেশ থেকে চলে যাবেন। তিনি ইজতেমায় অংশ নেবেন না। যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশে থাকবেন ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি কাকরাইলে থাকবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আশা করি এই সিদ্ধান্তের পর কাল থেকে আর কেউ সড়কে নামবেন না। সবকিছু শান্তিপূর্ণভাবে হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিরোধ মিটে যাবে। তাঁরা নিজেরা বিষয়টি বুঝেছেন। আগামীতে এই বিরোধ মিটে যাবে। এরই মধ্যে তাঁদের মুরব্বিরা বিষয়টি নিয়ে বসেছেন।
আখেরি মোনাজাত কে করবেন-সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান বলেন, তাবলিগ জামায়াতের সুরা সদস্যরা মিলে এ সিদ্ধান্ত নেবেন যে কে মোনাজাত করবেন, সবকিছু কীভাবে চলবেন।
আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ হজের পরে এই জায়গাতে সমবেত হয়। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্ব থেকে এখানে আসেব। কাজেই বাংলাদেশের সব মানুষের একটি আকর্ষণ থাকে কবে তাবলিগ জামায়াত শুরু হয়, আর কবে শেষ হয়। এই জামায়াত নিয়ে ভারত ও নিজামুদ্দিন মার্কাজের মধ্যে একটি বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। সেই বিতর্ক ধীরে ধীরে আমাদের দেশেও চলে আসে।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের এখানে তাবলিগ জামায়াতের সুরা সদস্য তাঁদের মধ্যে মতবিরোধ, মতপার্থক্য আসে। গতবছরও আমরা দেখেছি, এটা পরিলক্ষিত হয়েছিল। আমরা দুই দলকে বসিয়ে একটি সুন্দর সমাধানে এসেছিলাম। এবার শুরু থেকেই এই দুলের মতপার্থক্য এতই তীব্র ছিল যে, তার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কওমি মাদরাসা এবং অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমানরাও একত্রিত হয়েছিল। যার জন্য এবার আমাদের কাছে এই তাবলিগ জামায়াতের সবাইকে নিয়ে বারবার বসতে হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার তাবলিগ জামায়াতে কোনো হস্তক্ষেপ করেনি এবং আগামীতেও করবে না। আমরা চাচ্ছিলাম সবাই মিলেমিশে যেন ভালোভাবে তাবলিগ জামায়াতটি শেষ হয়-গতবার হয়েছে, তার আগেও হয়েছে এবং আগামীতেও হবে। আলেম-ওলামাদের মধ্যে যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল সেই উদ্দেশে তাদের সুরা সদস্যদের সঙ্গে বসে আমরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছি। এখানে সরকারের সমস্ত উচ্চপর্যায়ের লোকেরা ছিলেন। আলেম-ওলামাদের পক্ষ থেকে এ দেশের খ্যাত ব্যক্তিরা এখানে উপস্থিত ছিলেন। সবার সম্মতিতে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে এবং সেটি সবাই মেনে নিয়েছেন।
গত বুধবার মাওলানা সাদ এর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেওয়া ঠেকাতে বিমানবন্দর সড়কে বিক্ষোভ করেন তাবলিগ জামাতের একটি অংশ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে মাওলানা সাদকে বাংলাদেশ থেকে ভারতের দিল্লিতে ফেরত পাঠানোরও দাবি তোলা হয়। নইলে পরিস্থিতি খারাপ হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের যুগ্ম সম্পাদক ফজলুল হক কাশেমী জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনে বলেন, ‘তাঁকে (মাওলানা সাদ) সরালে দেশ শান্ত হবে। গাড়িঘোড়া চলবে। নইলে সব বন্ধ হবে।’
ফজলুল হক কাশেমীর বক্তব্য, দেশকে অশান্ত করার চেষ্টা চলছে। তাঁকে (মাওলানা সাদ) না আনতে বলা হয়েছিল। তিনি নিজেকে তাবলিগের আমির বলে ঘোষণা করেছেন, যা অনেকেই মানেন না। তিনি অনেক বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছেন।
এর আগে সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন না ভারতের তাবলিগ জামাতের মুরব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলভী।
বুধবার বেলা ১টার দিকে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন মাওলানা সাদ কান্ধলভী। তাঁর এ দেশে আসার প্রতিবাদে বিমানবন্দর এলাকায় বিক্ষোভ চলে। তাবলিগ জামাতের একাংশ এই বিক্ষোভে যোগ দেয়। এতে বিমানবন্দর থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।
তাবলিগ জামাতের আয়োজনে প্রতিবছর উপমহাদেশে মুসলিমদের বৃহৎ জমায়েত বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। তাবলিগের লোকজন বরাবরই শান্তি ও সম্প্রীতির বাণী প্রচার করে আসছেন। সম্প্রতি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাবলিগের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য হয়েছে। প্রথম পর্ব ১৪ তারিখে শেষ হবে। দ্বিতীয় পর্ব আবার তার দুই-তিনদিন পর অনুষ্ঠিত হবে।