শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

প্রচারের আড়ালে সুন্দরবনের শিক্ষক অমল স্যার

News Sundarban.com :
ডিসেম্বর ২২, ২০১৭
news-image

সুভাষ চন্দ্র দাশ 

সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অবিবাহিত শিক্ষক অমল পন্ডিত,তাঁর নিরলস কর্মযঞ্জের মধ্য দিয়ে সমাজে বাঁধা পড়ে আছেন । একদা এবং বর্তমান মানুষ গড়ার কারিগর। এক সময় শিক্ষকদের সম্পর্কে যত বেশি ভালো বলা কিংবা বিচার করা যেত,বর্তমানে সেই ধারণাটা বিশাল কঠিন। কিন্তুু ব্যতিক্রমি সুন্দরবনের বাসন্তী ব্লকের মহেশপুরের শিক্ষক অমল বাবু।
একদা শিক্ষক অমল বাবু এমনই প্রেরণা পেয়ে ছিলেন আর এক প্রবাদ প্রতিম পিতৃতুল্য  তথা সুন্দরবনের গর্ব ক্যানিংয়ের ট্যাংরাখালি বঙ্কিম সরদার কলেজের অধ্যাপক ডঃ সুধীন্দ্র নাথ ভট্টাচার্যের স্বান্যিদ্ধে। আর তাঁরই অনুপ্রেরণাতেই দীর্ঘ প্রায় ২৬ বছর ধরে কোলে-পিঠে মানুষ করে চলেছেন প্রত্যন্ত সুন্দরবনের পিছিয়ে পড়া দুঃস্থ পরিবারের ছেলে-মেয়েদের কে। মহেশপুর গ্রামে নিজ পৈতৃক ভিটের উপর একটি আশ্রমও গড়ে তুলেছেন। আশ্রমটি তার পিতৃদেবের নামাঙ্কিত মহেশপুর রাখাল চন্দ্র সেবাশ্রম। নদী-নালা বেষ্ঠিত সুন্দরবনের প্রত্যন্ত দ্বীপ মহেশপুর গ্রাম। সেখানে যশোদা বিদ্যাপীঠ(হাইস্কুল) এ দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন। সম্প্রতি স্কুলের শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়েছেন। ১৯৯০ সালে নিজের পিতৃসম্পত্তির উপর একচালা একটি ঘর তৈরী করে শুরু করেন আশ্রম। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রাম ঘুরে ঘুরে অসহায়,অনাথ,দরিদ্র ছেলে-মেয়েদের খুঁজে নিয়ে আসেন নিজের আশ্রমে। প্রথম দিকে সংখ্যাটা আট থাকলেও বর্তমানে তা ত্রিশ ছাড়িয়েছে। একদা একচালা আশ্রমটি বৃক্ষের ন্যায় ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামের মানুষজন থেকে সকলেই এক বাক্যে “মাষ্টার” মশাই নামে জানেন এবং ডাকেন। এহেন মানুষটি সাধারণের থেকেও অতি সাধারণ। একটি পরিহিত ধুতি ,পাঞ্জাবি ও কাঁধে একটি ঝোল ব্যাগই তার একান্ত সঙ্গী। শ্রদ্ধেয় মাষ্টার মশাইয়ের হাতে মানুষ হয়ে ইতিমধ্যে অনেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। অমলবাবু জীবনে সংসার ধর্মের কথা ভাবেননি। তার একমাত্র কারণ পাছে যদি আশ্রমের কাজে বাধা পড়ে। এলাকার মানুষজনই তার একমাত্র ভরসা। সকলেই কিছু না কিছু সাহায্য করেন তাঁদের প্রিয় “মাষ্টারমশাই” কে। এক সময় নিজের বেতনের টাকা দিয়ে আশ্রম চালিয়েছেন। আর অবসরের পর এখন তিনি সংকটময় হয়ে অনটনের মধ্য দিয়ে আশ্রম চালাচ্ছেন বলে জানান অমল বাবু।
প্রতিদিনই সকালে বাচ্চাদের কে ঘুম থেকে ডেকে তুলে মুখ ধুইয়ে পড়াতে বসান। সাথে সবার জন্য টিফিন থাকে বাতাসা,মুড়ি,চানাচুর  যখন যেমন থাকে। এরপর স্নান সেরেই  সকলেই স্কুলে যায়। আশ্রমের পাশেই প্রাথমিক এবং হাইস্কুল,সেখানেই যায় সকলে। আবার টিফিনের সময় আশ্রমে এসে সকলেই এক সাথে দুপুরের খাবার খায়। স্কুল ছুটির পর একটু খেলাধুলা তারপর আবার পড়া। এই ভাবেই অমল মাষ্টার চালিয়ে আসছেন নিজের অাশ্রম। এমনকি স্থানীয় গ্রামের মহিলারা খবই সামান্য পারিশ্রমিকে মাষ্টার মশাইয়ের আশ্রমের রান্না ও ঘর মোছার কাজ করে দেন। যত দিন অতিক্রান্ত হচ্ছে ততই চিন্তাশীল হয়ে পড়ছেন অমল মাষ্টার।  জীবন সায়াহ্নে এসে একদা ব্যাপক চিন্তামগ্ন। তাঁ এক এবং অদ্বিতীয় চিন্তা তাঁ মৃত্যুর পর কে সামলাবেন এই নিজের হাতে গড়া আশ্রম কে!!তবে ইতি মধ্যে অমলবাবুর শিক্ষাগুরু শ্রদ্ধেয় সুধীন্দ্র নাথ ভট্টাচার্যের বেশ কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী পাশে দাঁড়িয়েছেন। সেই সুশান্ত পাত্র,শেফালি পাত্রদের কে পাশে পেয়ে কিছুটা হলে ও মনোবল ফিরে পেয়েছেন মাষ্টার মশাই। কিন্তু বিশাল এই কর্মযঞ্জে আরো সহৃদয় মানুষ কে পাশে পেতে চান অমল মাষ্টার।
স্থানীয় মানুষের অাশা আকাঙ্খা আগামী দিনে সুন্দরবন ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে আমাদের প্রিয় মাষ্টার মশাই অমল পন্ডিতের নাম। যা নব প্রজন্মের কাছে এক বিরলতম ইতিহাস। ।