শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আসল বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা ২২ বছর পরে

News Sundarban.com :
ডিসেম্বর ১৫, ২০১৭

১৯৯৫ সালের একটি দিন। ভোরের আলো তখনও ভালভাবে ফোটেনি। জিও লিডা নামের এক ব্যক্তি তার তিনদিনের ছোট্ট ফুটফুটে মেয়েকে বাজারের ব্যাগে ভরে সবার অগোচরে চীনের বিখ্যাত ব্রোকেন ব্রিজে রেখে যান। রেখে যাওয়ার আগে আলতো করে ঘুমন্ত মেয়েটির মুখে চুমু একেঁ দেন বাবা। তারপর ছোট্ট একটা নোট লিখে রাখেন সেখানে। তাতে লেখা ছিল, ‘যদি ঈশ্বর আমাদের সহায় থাকেন তাহলে আজ থেকে ১০ কিংবা ২০ বছর পর তোমার সঙ্গে আবার আমাদের দেখা হবে। ‘ এরপর কান্না লুকাতে বাবা ছুটে চলে যান সেখান থেকে।

বাবা জিংজিকে ব্রিজে রেখে যাবার এক বছর পর আমেরিকান এক দম্পতি চায়নার একটি সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউট থেকে তাকে দত্তক নেন। তারা জিংজির বাবার লেখা নোটটা পান। তখন আমেরিকান সেই দম্পতি জিংজির আসল বাবা-মাকে জানান যে, তারা মেয়ের নাম রেখেছেন কেটি। সে ভালো আছে আর তারা তাকে খুব ভালোবাসেন।

কেটির বয়স যখন ১০ বছর তখন তার আমেরিকান বাবা তার চাইনিজ বাবাকে মেসেজ পাঠান যে তারা আসবেন ৭ জুলাই ঐ ব্রিজের উপর। কারণ প্রতিবছর ঐদিন চীনের ব্রোকেন ব্রিজে প্রিয় মানুষদের সাথে সবাই সাক্ষাৎ করেন।

কেটির জন্মদাতা পিতা বলছিলেন,’মেয়ের পালক পিতা-মাতার কাছ থেকে মেসেজ পাওয়ার পর সেই রাতটা আমরা ঘুমাতে পারিনি। বারবার মনে হয়েছিল যারা তাকে দত্তক নিয়েছে তারা হয়ত দুই বা পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের সাথে মেয়েকে দেখা করাবে না। তাই ইচ্ছে করেই ১০ বা ২০ বছরের কথা লিখেছিলাম। অবশেষে দেখা করার দিনটা এসে গেল। আমরা সকাল সাতটায় চলে গেলাম ব্রিজের উপর। দুপুর সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। কিন্তু মেয়েকে নিয়ে তার পালক বাবা-মা আর আসলো না’।

অসম্ভব হতাশা নিয়ে তারা ফিরে আসলেন।এরপর থেকে প্রতিবছর জিও ৭ জুলাই ব্রোকেন ব্রিজে যান মেয়েকে খুঁজতে। সারাদিন কেটে যায়। কিন্তু মেয়ের দেখা পান না। ধীরে ধীরে এই ঘটনা জানাজানি হয়ে গেল। চীনের মিডিয়া এই ঘটনা নিয়ে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করলো।

সেই অনুষ্ঠানে কেটির বাবা তার মেয়ের গল্প বললেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করল।

আমেরিকায় বসে কেটির দত্তক নেয়া বাবা মা এই ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারলেন। ইতিমধ্যে কেটির বয়স ২০ বছর হয়েছে। কেটির বাবা জিও টিভিতে দেখানো সেই অনুষ্ঠানে বলছিলেন “আমার স্ত্রী যখন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা তখন আমরা অ্যাবরশন করতে যাই। কারণ আপনি জানেন যে চীনে এক সন্তান নীতি। কেটির আগে আমাদের আরেকটা কন্যা সন্তান ছিল। কিন্তু যখন আমরা হাসপাতালে গেলাম তখন আমরা সন্তানের নড়াচড়া টের পেলাম তার মায়ের পেটের মধ্যে। এই কারণে অ্যাবরশন করাবো না বলে সিদ্ধান্ত নিলাম’।

কেটির বাবা জানান, এরপর পরিস্থিতি আরো জটিল হল। লুকিয়ে একটা নৌকার মধ্যে সন্তান প্রসব করতে হয় তার স্ত্রীকে।

কেটির বাবা বলছিলেন “আমরা ভেবেছিলাম পরিচিত কারো কাছে হয়ত আমরা রাখতে পারবো আমাদের সন্তানকে।কিন্তু তেমন কাওকে পাওয়া গেল না”।

কেটির বাবার বলার গল্প শুনে এবার তার পালক বাবা-মা কেটিকে প্রথমবারের মতো জানালেন তার আসল বাবা-মা চীনে থাকেন।আর তারা তাকে দত্তক নিয়েছেন।ঘটনা জেনে কেটি তার আসল বাবা-মায়ের সঙ্গে সেই ব্রিজে দেখা করতে যান এ বছরের আগস্টের শুরুর দিকে। ২২ বছর পর মেয়েকে দেখতে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে ওঠেন তার বাবা-মা। কেটি জানায় “যখন আমার বাবা-মায়ের সাথে দেখা হল তারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছিল। আর আমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছিল। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়নি তাদের ক্ষমা করার মত কিছু ঘটেছে। আমি বুঝতে পারি তারা পরিস্থিতির শিকার।’

কেটি তার বাবা মায়ের সাথে কয়েকটা দিন কাটান। এরপর ফিরে যান মিশিগানে তার দত্তক নেয়া আমেরিকান বাবা মায়ের কাছে।তবে এই ঘটনা কেটির জীবনটা একবারেই বদলে দিয়েছে। তিনি আবারও চীনে তার বাবা-মায়ের কাছে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।