বুধবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ছেলের খুনিকে ক্ষমা করে বুকে জড়িয়ে ধরলেন বাবা

News Sundarban.com :
নভেম্বর ১৩, ২০১৭
news-image

ছেলের খুনিকে বুকে জড়িয়ে ধরেছেন এক বাবা। একই সঙ্গে ওই খুনিকে ক্ষমা করে দিয়েছেন তিনি। ওই বাবা হলেন ৬৬ বছর বয়সী আবদুল-মুনিম সোমবাত জিতমউদ। বর্তমানে তিনি থাইল্যান্ডের বসবাস করলেও আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতেন।

যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকিতে মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে। ডেইলি মেইলের খবরে বলা হয়, জিতমউদের ছেলে সালাউদ্দিন হত্যার রায় দিতে আদালত প্রস্তুত। মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হবে ওই খুনিকে। এমন সময় আদালতের বিচারকের দিকে তাকিয়ে বাবা আবদুল-মুনিম সোমবাত জিতমউদ বলেন,’ অল্প বয়সের ছেলে। ওকে ক্ষমা করে দিলাম। ইসলাম ধর্ম ক্ষমার কথাই বলে।’

পরে ছেলে হত্যার আসামি ট্রে আলেকজান্ডার রেলফোর্ডকে বুকে জড়িয়ে ধরেন সোমবাত জিতমউদ। এ সময় পিন-পতন নিরবতায় আবেগঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। চোখের পাতা ভিজে উঠে কেনটাকির ফেয়েতে কাউন্টি সার্কিট জজ কিমবার্লি বানেলের। কিছুক্ষণের জন্য আদালত মুলতুবি ঘোষণা করে নিজের কক্ষে চলে যান বিচারক বানেল।

পিৎজা খেতে গিয়ে আড়াই বছর আগে জিতমউদের ছেলে সালাউদ্দিনকে ছুরি মেরে খুন করার অভিযোগ রয়েছে ২৪ বছর বয়সী রেলফোর্ডের বিরুদ্ধে। রয়েছে পিৎজার দোকানে ডাকাতি, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগ। তদন্ত, তথ্যাদিতে তা প্রমাণিতও হয়েছে আদালতে। এত কিছুর পরেও বাবা হয়ে ছেলের খুনিকে ক্ষমা করে দিলেন জিতমউদ। এই ঘটনা অপূর্ব ক্ষমার দৃষ্টান্তের পাশিপাশি ভিন্নরকম এক চাঞ্চল্যের জন্ম দিয়েছে।

 

রেলফোর্ডের বিরুদ্ধে যেসব ধারায় অভিযোগ ছিল, তাতে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড অথবা ৩১ বছরের কারাদণ্ড সাজা হওয়ার কথা। কিন্তু জিতমউদের বক্তব্য শুনে কিছুক্ষণ পর আদালতে ফিরে এসে বিচারক বানেল সাত বছরের কারাদণ্ড দেন খুনি রেলফোর্ডকে।

পরে আসামির কাডগড়ায় গিয়ে তাকে জড়িয়ে রেলফোর্ডের কানে-কানে সালাউদ্দিনের বাবা জিতমউদ বলেন, ‘কোনও চিন্তা করো না। ইসলামকে স্মরণ করবে সব সময়।ভাবছ কেন? সময়টা দেখতে-দেখতে কেটে যাবে। এরপর তোমার জীবনটা আবার নতুন করে শুরু হবে। একেবারে অন্যভাবে এবার জীবনটাকে গড়ে তুলবে। শুধু ভালো ভালো কাজ করবে এবার, আর সবাইকে ভালো কাজ করতে উৎসাহ জোগাবে। সঠিক পথে চলবে সব সময়। জেল থেকেই ইসলামি জীবন শুরু করে দিতে পার। এভাবে সাত বছর পর তোমার ৩১ বছর বয়সে যখন তুমি জেল থেকে বেরিয়ে আসবে, তখন জীবনটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য নিজেকে তৈরি রাখতে পারবে।’

এসব শুনে খুনি রেলফোর্ডের চোখে পানি চলে আসে, তিনি অনুতপ্ত হন। জিতমউদ তখনও তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে ছিলেন। জিতমউদ তার পরিবার নিয়ে বর্তমানে থাকেন থাইল্যান্ডে। আগে অবশ্য তিনি বহু বছর যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেছেন। দেশটিতে বিভিন্ন মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হিসেবে কাজ করেছেন আবদুল-মুনিম সোমবাত জিতমউদ। লেক্সিংটন ইউনিভার্সাল অ্যাকাডেমির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

জিতমউদের ছেলে সালাউদ্দিনের লেক্সিংটনে একটা পিৎজার দোকান ছিল। প্রায় আড়াই বছর আগে সেখানে ২২ বছর বয়সী সালাউদ্দিনকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন রেলফোর্ড। এ সময় দোকান লুঠপাট করে ক্যাশবাক্স ভাঙচুর করা হয়েছিল।