মঙ্গলবার, ১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ক্ষোভে পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি

News Sundarban.com :
নভেম্বর ১৩, ২০১৭
news-image

এম এ আহাদ শাহীন:

তিন মাসের নাটকীয় নানা ঘটনার পর অবশেষে পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। শুক্রবার সকালে তিনি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে সিঙ্গাপুর থেকে কানাডার উদ্দেশে যাত্রা করেন। বিচারক অপসারণ নিয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর তাকে নিয়ে যে উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্ট হয়, এসময় সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রধানমন্ত্রীসহ নেতারা প্রধান বিচারপতিকে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করেন। এতে করে মানসিক চাপে পড়েন প্রধান বিচারপতি। এই ঘটনায় পদত্যাগের মাধ্যমে ক্ষোভের প্রকাশ করলেন তিনি।

এদিকে প্রধান বিচারপতির এস কে সিনহার পদত্যাগপত্র বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছেছে। শনিবার (১১ নভেম্বর) রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনও প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের ঘটনা এটাই প্রথম।

এদিকে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, শুনেছি প্রধান বিচারপতির পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে এসে পৌঁছেছে। এখন পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা না করা রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমি এখনও এই পদত্যাগপত্র দেখিনি। তাই এবিষয়ে কোনও মন্তব্য করবো না।

প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করলে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে- এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনারা হয়তো সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ সম্পর্কে অবগত আছেন। ৯৭ অনুচ্ছেদে আছে যে প্রধান বিচারপতি যদি অনুপস্থিত, অসুস্থ বা অন্য কোনও কারণে তার কার্যভার পালন করতে না পারেন সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের প্রবীণতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব দিতে পারেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত পদত্যাগপত্রের বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়া যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি থাকবেন।’

এর আগে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করলেও কোনো সাংবিধানিক শূন্যতার সৃষ্টি হবে না। কারণ সংবিধানে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বলা আছে।

এসকে সিনহার পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, তিনি দেশে ফিরে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরিবারের সদস্যদের অনুরোধে সিঙ্গাপুরে বসেই পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেন। এ বিষয়ে তার স্ত্রী, দুই মেয়েসহ পারিবারের অন্য সদস্যরা বেশি ভূমিকা রেখেছেন।
জানা গেছে, বাংলাদেশ সময় দুপুর পৌনে ১২টায় বিচারপতি এসকে সিনহা সিঙ্গাপুর থেকে কানাডার উদ্দেশে রওনা দেন। শনিবার ভোরে তার কানাডায় পৌঁছার কথা রয়েছে। সেখানে তার ছোট মেয়ের বাসায় উঠবেন। আপাতত তিনি সেখানেই থাকবেন।

বিচারপতি এসকে সিনহা ছুটিতে গেলে সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আপিল বিভাগের প্রবীণতম বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি।

সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়, ‘প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হইলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে প্রধান বিচারপতি তাঁহার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ বলিয়া রাষ্ট্রপতির নিকট সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইলে ক্ষেত্রমত অন্য কোন ব্যক্তি অনুরূপ পদে যোগদান না করা পর্যন্ত কিংবা প্রধান বিচারপতি স্বীয় কার্যভার পুনরায় গ্রহণ না করা পর্যন্ত আপীল বিভাগের অন্যান্য বিচারকের মধ্যে যিনি কর্মে প্রবীণতম, তিনি অনুরূপ কার্যভার পালন করিবেন।’

এর আগে ১ আগস্ট উচ্চ আদালতের বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে নিয়ে করা ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় প্রকাশিত হয়। এ রায়ে প্রধান বিচারপতির দেওয়া বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিলেন মন্ত্রী, দলীয় নেতা ও সরকারপন্থি আইনজীবীরা। তারা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিও তোলেন।

সমালোচনার মধ্যেই ১ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা হঠাৎ করেই এক মাসের ছুটির কথা জানিয়ে চিঠি দেন।

পরের দিন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিয়াকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়।

এসময় আইনমন্ত্রী জানিয়ে ছিলেন, প্রধান বিচারপতি ক্যান্সারে আক্রান্ত। পরে ১১ অক্টোবর চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতির এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার ছুটি ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

গত ১৩ অক্টোবর রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন প্রধান বিচারপতি। দেশ ছাড়ার আগে প্রধান বিচারপতি তার বাসভবনের সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি অসুস্থ নয়। বিচার বিভাগের স্বার্থে ফিরে আসব। ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে একটি মহল প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়েছেন।’

তিনি একটি লিখিত বিবৃতিও সাংবাদিকদের দিয়ে যান।