শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মেতে উঠেছে ভাগলপুরে শরৎচন্দ্রের জগদ্ধাত্রী পুজো

News Sundarban.com :
অক্টোবর ২৯, ২০১৭
news-image

ভাগলপুরে ১৭, মানিক সরকার পথ। এক অর্থে বাড়িটা ঐতিহাসিক। বছরের আর পাঁচ দিনের থেকে এ সময়টায় ওই বাড়ির একটা অন্য গুরুত্ব থাকে। বাড়ে ব্যস্ততা। জগদ্ধাত্রী পুজোকে কেন্দ্র করে। এবারেও তার অন্যথা হয়নি। আলোয় সেজেছে বাড়ি। রবিবার মাতবে ঢাকের আওয়াজে।
এই বাড়িতে এক সময় থাকতেন কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। ভাগলপুরে গাঙ্গুলিবাড়ির মেয়ে ভুবনমোহিনী ছিলেন শরৎচন্দ্রের মা। গাঙ্গুলিবাড়ির জামাই মতিলাল, মানে শরৎচন্দ্রের বাবা এক সময় চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়েন। সপরিবারে শ্বশুরবাড়িতে ভাগলপুরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। শরৎচন্দ্র কৈশোর ও যৌবনের বেশ ক’টি বছর ছিলেন এই গাঙ্গুলিবাড়িতে। প্রবেশপথের পাশে দেওয়ালে পেল্লাই শ্বেত পাথরের ফলকে ইংরেজিতে সংক্ষেপে তা লেখা।
‘তত্ত্ববোধিনী সভা’ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অন্তত ১০ বছর পরও ঠাকুরবাড়িতে দুর্গাপূজা আর জগদ্ধাত্রী পূজা অনুষ্ঠিত হওয়ার খবর আমরা জানতে পারি। কিন্তু শরৎচন্দ্রের সঙ্গে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রত্যক্ষ সম্পর্কের কথা অনেকের জানা নেই। ভাগলপুরের এই বাড়িতে দু’শ বছরেরও বেশি সময় ধরে হচ্ছে জগদ্ধাত্রী পুজো। শরৎচন্দ্রের মামাবাড়ির তিন শরিক ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ, উপেন্দ্রনাথ এবং ভূপেন্দ্রনাথ। যৌথ পরিবার ভেঙ্গে যাওয়ায় ১৯৩৫ সাল নাগাদ এই পুজো বন্ধ হয়ে যায়।
বাড়ির বর্ষীয়ান সদস্য অজিতশঙ্কর গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, “শরৎচন্দ্রের উৎসাহ ও আর্থিক সহায়তায় আবার পরিবারে এই পুজো শুরু হয়। শরৎচন্দ্রের তিরোধানের পর ফের পুজো বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক বছরের মধ্যে অলৌকিক এক ঘটনার মাধ্যমে শুরু হয় শরৎচন্দ্রের অতি পছন্দের জগদ্ধাত্রী পুজো।”
জগদ্ধাত্রী দেবী ত্রিনয়না, চতুর্ভূজা ও সিংহ বাহিনী। তাঁর হাতে শঙ্খ, চক্র, ধনুক ও বান। গলায় না যজ্ঞ উপবীত। বাহন সিংহ হস্তিরূপি অসুরের পৃষ্ঠে দন্ডায়মান। দেবীর গাত্রবর্ণ উদীয়মান সূর্যের ন্যায়। কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে দেবী জগদ্ধাত্রীর পুজো হয় এই বাড়িতে। জগদ্ধাত্রী হলেন দেবী দূর্গার আর এক রূপ। উপনিষদে এঁরই নাম উমা হৈমবতী। বিভিন্ন পুরান ও গ্রন্থে রয়েছে এর উল্লেখ।
গৌরবময় অতীত আর কিংবদন্তি। তার মাঝেই সাবেক জৌলুস আর আভিজাত্যে ভরা সেই পুজো। দুর্গাবারী-মশারচক এবং এই বাড়ির প্রায় বিপরীতে কালীবাড়িতেও জগদ্ধাত্রীর মূর্তিপুজো হয়। এ ছাড়া পটে পুজো হয় চম্পানগরে। ভাগলপুরের এ সব জগদ্ধাত্রী পুজোর মাঝে গাঙ্গুলিবাড়ির পুজো আজও স্বতন্ত্র।
শনি-রবি-সোম এই তিন দিন পুজোর ৭মী, ৮মী ও ৯মী। গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারের দুই ভাই উজ্বল আর শান্তনু ব্যস্ত বাইরের উদ্যোগ-আয়োজনে। আর, ঘরোয়া ব্যবস্থাদির কাজে মহাব্যস্ত ওদের পত্নী যথাক্রমে অপর্ণা আর মালা। বছরের এই সময়টা লোকজন, হইহই- তাই খুব আনন্দ বাড়ির দুই খুদে সমুজ্বল (সম্পু)আর স্বর্ণালীর (রিনি)।