শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ছোট্ট জাইমাল নিজ দেশকে আবর্জনামুক্ত করতে চায়

News Sundarban.com :
অক্টোবর ২৬, ২০১৭
news-image

‘যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলার আগে মানুষ যদি একটু ভাবে, তাহলে হয়তো তারা এমন করবে না। কারণ আমাদের পরিবেশের এতে ক্ষতি হচ্ছে।’ পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের সরগোঢার অদূরে একটা অস্থায়ী আর্বজনার স্তূপের পাশে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিল ১০ বছরের মেয়ে জাইমাল উমর। পাকিস্তানের অনেকে কাছে যে দেশের সবচেয়ে কম বয়সী সামাজিক উদ্যোক্তা। জাইমালের কাছে কি এই সমস্যার কোনো সমাধান রয়েছে?

চোখ যতদূর যায় বিভিন্ন রঙের প্লাস্টিক ব্যাগ, ধাতব আর সাধারণ বর্জ্যে চারদিক ভরে রয়েছে। আবর্জনার একাংশে আগুন ধরানোয় বিষাক্ত ধোঁয়ার গন্ধ নাকে ভেসে আসছিল। জাইমালের সামনে যা দেখলাম তা পাকিস্তানের আবর্জনা সমস্যার কনামাত্র। দেশটির পরিবেশ রক্ষা বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, পাকিস্তানে প্রতিবছর প্রায় ২ কোটি টনের মতো কঠিন বর্জ্য তৈরি হয়। প্রতিবছরই যা ২ দশমিক ৪ শতাংশ করে বেড়ে চলছে।

জাইমাল বলে, এমন ছবি গোটা পাকিস্তানে খুঁজে পাবেন। এই প্লাস্টিক ব্যাগগুলো মাটিতে মেশে না। আর মানুষজনও দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে যেখানে সেখানে এগুলো ফেলে যায়। পুনর্ব্যবহার নিয়ে কোনো চিন্তাভাবনা নেই এদের।

পাকিস্তানে কখনও সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট (কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা) নিয়ে কাজ হয়নি। দেশের সরকারই আবর্জনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করে। কিন্তু আবর্জনা ফেলার স্থানের সংখ্যা ক্রমশই কমে আসছে। আস্তাকুড়ে আবর্জনা ফেলে তা পুড়িয়ে দেওয়াই জঞ্জাল থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার একমাত্র উপায় এদেশে। পাকিস্তানে যত্রতত্র পড়ে থাকা জঞ্জাল থেকে রোগ ছড়ানোর ঘটনা প্রায়ই ঘটে।

দূষণ রুখতে ও পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে জাইমালের তৈরি জি-ব্যাগ ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। খবরের কাগজের টুকরো দিয়ে রঙবেরঙের ব্যাগ তৈরি করে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের কাছে বিক্রির মধ্য দিয়ে কাজ শুরু করে জাইমাল। এটা থেকে আসা অর্থ বিভিন্ন সামাজিক কাজে ব্যয় করা হতো। এভাবে ছোট পরিসরে শুরু করলেও গত তিন বছরে প্রায় চার-পাঁচ হাজার ডলারের মতো ব্যাগ বিক্রি করেছে ছোট্ট মেয়েটি।

এ বিষয়ে জাইমাল বলে, আমি ইউটিউব দেখে প্রথমে এই ব্যাগ তৈরি শিখি। স্কুলের হোমওয়ার্ক সেরে জি-ব্যাগ তৈরির জন্য সময় বের করা কঠিন ছিলো। তাই সপ্তাহের শেষে বা অন্য ছুটির দিনগুলোতে ভাইদের সঙ্গে এ কাজ করতাম। বাবা ও দাদু আমার কাজের জন্য কাঁচামাল কিনে দিতেন। না হলে এ কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতাম না।

জাইমালের তৈরি ব্যাগ বিক্রির অর্থ পাকিস্তানের অনাথ ও পথশিশুদের নিয়ে কাজ করা সংস্থা এসওএস চিলড্রেন্স ভিলেজে পাঠানো হয়। সে আরও বলে, আমার আয় করা টাকা নিয়ে ওয়াটার কুলার, ওয়াশিং মেশিন, ব্যাটারির মতো এমন সব জিনিস কেনা হয়, যা ওদের রোজকার কাজে লাগে। ওদের মুখে হাসি দেখলে আমার খুব ভালো লাগে। ওদের হাসি আমাকে অনুপ্রেরণা যোগায়।

জাইমালের উদ্ভাবনী ও সামাজিক কাজের প্রশংসা করেছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম। ওর তৈরি জি-ব্যাগ ইতিমধ্যেই পাকিস্তান, সৌদি আরব ও আমেরিকায় একাধিক পুরস্কার জিতে নিয়েছে। জাইমাল বলে, আন্তর্জাতিক পুরস্কার আমার কাছে অনুপ্রেরণা। আমার দেশ ও মা-বাবাকে আমার কাজের মধ্যে দিয়ে কিছু ফেরত দিতে পেরে আমি গর্বিত।

ওর জি-ব্যাগ এখন অনলাইনেও বিক্রি হচ্ছে। আর এর মাধ্যমে জাইমালের সামনে খুলে গেছে নতুন দিগন্ত। সে বলে, মেয়েরা নিজেদের উদ্যোগে কিছু করতে পারে না বলে পাকিস্তানে একটা ধারণা রয়েছে। আমার কিন্তু কাজ করতে কখনও অসুবিধা হয়নি। আমি আগামী দিনে নিজের ব্যবসা করতে চাই। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জি-ব্যাগের ব্যবসা এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি অন্যদের কাজও সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। আমার লক্ষ্য পাকিস্তানের বাইরেও নিজের কাজকে নিয়ে যাওয়া।

এজন্য আরও দ্রুত কাজ করতে চায় জাইমাল। তার কাজের মধ্যে দিয়ে পরিবেশ নিয়ে দেশের মানুষের চিন্তাভাবনার পরিবর্তন আনতে চায় সে। সূত্র: বিবিসি।