শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মুখে সমালোচনা ও অভিযোগ দেওয়ার বদলে আমরা কার্যক্রমের মাধ্যমে বিশ্বকে দেখাবোঃসু চি

News Sundarban.com :
অক্টোবর ২৪, ২০১৭
news-image

রাখাইন সংকট নিরসনে বেসামরিক প্রশাসনের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক সমাধান চান মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি। অন্তত এমনটাই মনে করছেন এ অঞ্চলে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের সাবেক বার্তা সম্পাদক মিয়ানমার বিশেষজ্ঞ ল্যারি জাগান।

সোমবার মিয়ানমার টাইমসে প্রকাশিত নিজের কলামেই এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন জাগান।

কলামে তিনি লিখেছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংকট নিরসনে সরকারের নতুন কৌশলগত পরিকল্পনার রূপরেখা দিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রীয় পরামর্শক অং সান সু চি। এর পরিকল্পনার আওতায় ‘ন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ ফর হিউম্যানিটেরিয়োন অ্যাসিস্ট্যান্স, রিসেটেলমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে ইন রাখাইন স্টেট’ নামে বেসামরিক নেতৃত্বাধীন একটি সংস্থা গঠন করা হয়েছে, যে সংস্থাকে সহায়তা দেবে বিদেশিরা। এই সংস্থা শরণার্থীদের ত্রাণ সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি তাদের প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসনের বিষয়টি দেখভাল করবে। গত ১২ অক্টোবর জাতির উদ্দেশ্যে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে এ রূপরেখা ঘোষণা করেন সু চি।

জাগানের মতে, রাখাইন সংকট নিরসনে গত ২৪ আগস্ট দেওয়া কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদনকে ঘিরে সরকারের দীর্ঘ-প্রতিশ্রুত রোডম্যাপ অবশেষে প্রকাশ করলেন সু চি। তিনি যে সংস্থা গঠনের কথা বলেছেন সেই কমিটি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন তদারকি করবে, যা নেতৃত্বে থাকবে সু চি নিজেই।

কলামে তিনি লিখেছেন, রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর চেকপোস্টে হামলা পর সেখানে নতুন করে সৃষ্ট সহিংস পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে গত আট সপ্তাহে পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান পালিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এই পরিস্থিতিকে জাতিসংঘ বর্ণনা করেছে সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট হিসেবে।

জাগানের মতে, ছয় সপ্তাহের বেশি আগে কফি আনান তার প্রতিবেদন দাখিল করার পর পশ্চিম রাখাইনের সংঘাত-জর্জরিত এলাকার সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও অবিশ্বাসের মূল কারণ দূর করা এবং সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদানের পরিকল্পনা প্রণয়নে কাজ করছে মিয়ানমার সরকার।

কলামে উল্লেখ করা হয়েছে, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে যাওয়া শরণার্থীরা তাদের দুর্দশার জন্য দেশটির সেনাবাহিনীকে দায়ী করে বলছে, সেনাবাহিনীই ঘরবাড়ি ধ্বংস করে দিয়ে তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করেছে এবং রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান চলাকালে শত শত মানুষের মৃত্যুর জন্য সেনাবাহিনীই দায়ী। এছাড়া পালিয়ে যাওয়া অনেক মুসলমান নারীর অভিযোগ— মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা তাদের ধর্ষণ করেছে। তবে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে সু চি অত্যন্ত সচেতনভাবে সেনাবাহিনীর সমালোচনা, এমনকি সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উল্লেখ করা থেকেও বিরত ছিলেন।

জাগান লিখেছেন, এ নিয়ে মিয়ানমারের বাইরে থেকে যেসব মতামত আসছে তার সারাংশ হচ্ছে— সু চি সেনাবাহিনীর পটেকেই রয়েছেন। তবে এই মতামতের বিপরীতে বলা যায়, সু চির এই অবস্থানের অর্থ এই নয় যে তিনি সেনাবাহিনীর সঙ্গে ভিড়ে গেছেন। বরং এটা তার দিক থেকে বিস্তৃত একটি কৌশলগত পরিকল্পনা, সু চির ঘনিষ্টজনদের অন্তত তেমনটাই মত। সু চি যেমনটা তার ভাষণেও বলেছেন, ‘মুখে সমালোচনা ও অভিযোগ দেওয়ার বদলে আমরা বরং আমাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে বিশ্বকে দেখাবো। রাখাইন রাজ্যে করার মতো অনেক কিছু্ই রয়েছে।’

মিয়ানমার সরকারের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে কলামে জাগান উল্লেখ করেছেন, ‘সু চি জ্বালাময়ী ও বিভক্তিমূলক মন্তব্য থেকে সরে আসতে চান। তিনি চান যুক্তি ও ভাষার নির্যাস, যা গল্পকে নিয়ন্ত্রণ করে।’

জাগানের মতে, সু চি চান বেসামরিক প্রশাসনের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক সমাধান। কারণ তিনি মনে করেন, দেশের ভবিষ্যৎ এবং এর গণতান্ত্রিক রূপান্তর এর ওপরই নির্ভরশীল, মিয়ানমার সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্র অন্তত এমনটাই বলছে।