প্রতিদিন শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করা হত অন্তত ২০ জনের সঙ্গে

এমন ঘটনা পোড় খাওয়া সিনেমার প্লটকেও হার মানায়! কিন্তু বাস্তবকে কেন্দ্র করেই তো চলচ্চিত্রের ধারণার শুরু। আর বাস্তবে এমনই এক ঘটনার সাক্ষী থাকল দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ডহারবার। বুদ্ধির জোরে পাচারকারীদের ডেরা থেকে বোনকে বাঁচিয়ে আনলেন নয় মাসের অন্ত্বঃসত্ত্বা দিদি।
ঘটনার সূত্রপাত চলতি বছরের শুরুর দিকে। প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে ১৬ বছরের এক তরুণীকে বাড়ি থেকে বের করে আনে এক যুবক। মেয়েটিকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রথমে কলকাতা, তারপর সেখান থেকে দিল্লি চলে যায় ওই যুবক। মেয়েটি তখনও জানত না তার ভাগ্যে কী নেমে আসছে?
মেয়েটি পড়েছিল পাচারকারীদের খপ্পরে। অভিযোগ দিল্লিতে এনে ওই কিশোরীকে বিক্রি করে দেওয়া হয় রাজধানীর সবথেকে বড় যৌন পল্লি জিবি রোডে। পাঁচ মাস সেখানেই ছিল সে। রোজ নেশার ওষুধ খাওয়ানো হত তাকে। দিনে দু’বার জুটত খাবার। প্রতিদিন শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করা হত অন্তত ২০ জনের সঙ্গে। কোনও খদ্দের অভিযোগ করলে উপোস করিয়ে রাখা হত। এছাড়া মারধর, সিগারেটের ছ্যাঁকা তো ছিল নিত্য ব্যাপার।
এরমধ্যে হঠাৎ একদিন এক খদ্দেরের ফোন থেকে মাকে ফোন করে মেয়েটি। জানায়, সে রয়েছে দিল্লির জিবি রোডের কাছে যৌন পল্লিতে। মেয়েটির পরিজনরা পুলিশে খবর দেন। কিন্তু দিল্লি পুলিশের সাহায্য পেলেও রাজ্য পুলিশ খুঁজে পায়নি। তখন বোনকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন তাঁর নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা দিদি। মায়ের ফোনে যে ব্যক্তির ফোন এসেছিল, তাকে একটি মিসড কল দেন তিনি। মিসড কল পেয়ে ফোন করে ওই ব্যক্তি।
উলটোদিকে মহিলার গলা পেয়ে কথা বলতে থাকে। কিশোরীর দিদি এমন করে কথা বলতে থাকেন যাতে মনে হয় লোকটির প্রতি তাঁর আগ্রহ তৈরি হয়েছে। সে তখন তাঁকে দিল্লি আসতে বলে। এবং জানায়, সব খরচ দেবে। নিজের ছবি পাঠায়। সঙ্গে একটি ঠিকানাও। সেই তথ্য মেয়েটি তুলে দেন পুলিশের হাতে। সেখান থেকে তা পায় দিল্লি পুলিশ। পুলিশ ওই ব্যক্তিকে আটক করলে সে স্বীকার করে, পাচার হওয়া বাঙালি মেয়েটিকে সে চেনে। এবং এও বলে, জিবি রোডের নিষিদ্ধ পল্লিতেই সে রয়েছে।
পুলিশ ও দিল্লি মহিলা কমিশন সক্রিয় হয়ে ওঠায় ভয় পেয়ে যায় জিবি রোডের দালালরা। ডায়মন্ডহারবারে নিয়ে এসে মেয়েটিকে ছেড়ে দেয় তারা, ৩০০০ টাকাও দেয়। বলে দেয়, টাকা রোজগার করতে হলে ফের জিবি রোডে ফিরে যেতে। আতঙ্কিত অবস্থায় মেয়েটি এখন রয়েছে একটি হোমে।