বুধবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

গঙ্গাসাগর ও কপিলমুনী আশ্রম

News Sundarban.com :
সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৭
news-image

শশাঙ্ক শেখর মন্ডল

১ পর্ব
কথায় বলে সব তীর্থ বারবার গঙ্গাসাগর একবার। আবার হিন্দুশাস্ত্র মতে গঙ্গাসাগর তীরে শ্রাদ্ধ কিংবা শিবপুজো করলে পরম পুণ্য লাভ হয়। গঙ্গাসাগরতীরে মৃতু্য হলে আত্মার সদগতি হয়। মহাভারতে বলা আছে গঙ্গানদী যে সব পাহাড়ের পাদদেশ, গ্রাম ও নগরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সে সব জায়গা অতি পবিত্র। তাই হিন্দুরা মনে করেন, গঙ্গাস্নান ও গঙ্গার জলপানে শরীরমন সুদ্ধ হয়। সেই প্রাচীনকাল থেকেই গঙ্গা হিন্দুদের কাছে অতি পবিত্র বলে পরিচিত। এই গঙ্গা প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণবঙ্গে বঙ্গোপসাগরের যেখানে মিলিত হয়েছে সেই স্থান গঙ্গার মোহনা বা গঙ্গাসাগর নামে খ্যাত।
কথিত আছে প্রাচীনকালে এই দেশে ভরত নামে অতি ধর্মপরায়ণ এক রাজা বাস করতেন। তাঁর নাম অনুসারে এই দেশের নামকরণ হয় পুণ্যতীর্থভমি ভারতবর্ষ। পুরাণ মতে রাজাভরতের পুত্র ছিলেন অসিত। তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধর্মশীল ও ধীরু প্রকৃতি। রাজপুত্র অসিত শত্রুদের কাছ থেকে যুদ্ধে হেরে গিয়ে জীবনসঙ্গীনী দুই পত্নীকে নিয়ে নিজের রাজ্য ছেড়ে বনবাসে যান। বনবাসে হিংসাবসত দুই পত্নীকে বিষপান করান। ও তাতে একজনের মৃতু্য হয়। অপরজন একজন পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। নবজাতক সেই পুত্র সন্তানের নাম হয় সাগর। বড় হয়ে সাগর রাজা হন। রাজা সাগরের দুজন রানি ছিলেন। মহেশ্বরের কৃপা ও আশীর্বাদে একজন রানি ৬০ হাজার পুত্র সন্তানের জন্মদেন এবং অপরজন এক পুত্র সন্তানের জন্মদেন।
পুরাণ অনুসারে তত্কালীন রাজ রাজারা বেশিরভাগ সময়ে যাগযজ্ঞ ও অন্যান্য ধর্মাচরণ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। ইতিমধ্যে এক সময়ে রাজা সাগরের অশ্বমেধযজ্ঞ করার ইচ্ছা হল। ঠিক হয় অতীব সুলক্ষণ, তেজস্বী ও যুবক ঘোড়াকে মন্ত্রপুত সংকল্প করে সুসজ্জায় সজ্জিত করে ইচ্ছা ভ্রমণে ছেড়ে দেওয়া হবে। যজ্ঞের ঘোড়া সারাদেশে ঘুরে বেড়াবে। বছর শেষে ঘোড়াটি ফিরে এলে আড়ম্বরে যজ্ঞের অনুষ্ঠান শুরু হবে। যজ্ঞের ঘোড়াটি বলি দেওয়া হবে এবং ঘোড়ার রক্ত মাংস যজ্ঞের আগুনে আহুতি দিয়ে উত্সর্গকৃত। ঘোড়াটিকে রক্ষার জন্য রাজা তার বীর বিক্রমশালি ৬০ হাজার পুত্র নিয়োগ করেন। রাজপুত্রগণ যজ্ঞাশ্বটির পেছন পেছন ছুটে বেড়ালেন। সাগর রাজার এই অশ্বমেধযজ্ঞের কথা জানতে পেরে গেলেন দেবরাজ ইন্দ্র। এবং নিজে ভীত হলেন।
কথিত আছে যজ্ঞ সফল হলে যজ্ঞকারীর পার্থীত বস্তুর সহজলভ্য হয় ও মনের ইচ্ছাপূরণ হয়। তাই ইন্দ্র ভাবলেন রাজা যদি তাঁর রাজ্যটি প্রার্থনা করেন তাহলে স্বর্গ রাজ্য তাঁকে হারাতে হবে এবং স্বর্গচু্যত হতে হবে। এ আশঙ্কায়, যজ্ঞে ছুটে বেড়ানো ঘোড়াটিকে সকলের অলক্ষ্যে সরিয়ে নিলেন দেবরাজ ইন্দ্র। এবং যজ্ঞাশ্বটিকে পাতাল প্রদেশে সমুদ্রতটে মহর্ষি কপিলমুনী আশ্রমের কাছে বেঁধে রেখে গেলেন। সে সময় কপিলমুনী তাঁর আশ্রমে ছিলেন ধ্যানমগ্ন।
উল্লেখ্য, প্রাচীন ধর্মগ্রন্থে স্বর্গ উচ্চতর ভমি, সমতট ভমি মর্ত এবং পাতাল নিম্নভমি নামে বর্ণিত। এদিকে রাজপুত্ররা ঘোড়াটিকে চতুর্দিকে অনুসন্ধান করে পেতে ব্যর্থ। পরিশেষে জল জঙ্গলের পরিপূর্ণ নিম্নভমিতে খুঁজে বেড়াতে লাগলেন।

(চলবে)