শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ক্ষীণ দৃষ্টির জেরে পিছিয়ে বহু শিশু

News Sundarban.com :
সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৭
news-image

ফের পণ্ড হল পরিশ্রম। এ বারও ক্লাসে প্রথম দশের বাইরে শৌর্য্য। মুখ চুন করে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটাকে নিয়ে নাজেহাল ওর বাবা-মা। সবই তো ঠিকঠাক জানে। এত প্রস্তুতি সত্ত্বেও পরীক্ষায় কেন পিছিয়ে যাচ্ছে?

ডোরেমন, সুপারম্যানে বুঁদ হয়ে থাকা প্রিয়াঙ্কার পছন্দ ল্যাপটপ। কেন? স্বতঃস্ফূর্ত উত্তর ছোট্ট মেয়ের, টিভি দেখতে সামনে চলে গেলেই তো বাবা-মা টেনে পিছিয়ে দেয়। কিন্তু দূর থেকে দেখতে আমার অসুবিধা হয়!

চক্ষু চিকিৎসকদের মতে, শৌর্য, প্রিয়াঙ্কাদের এই ছোট সমস্যাগুলো কিন্তু ক্ষীণ দৃষ্টির লক্ষণ। যার জেরে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে বহু শিশু। ঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে বাড়ে সমস্যা। কিছু ক্ষেত্রে অন্ধ হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যায়।

চক্ষু চিকিৎসক অভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ক্ষীণ দৃষ্টির সমস্যা হয় অ্যামব্লায়োপিয়া থেকে। গঠনগত ত্রুটি ছাড়াই যদি দু’টি চোখের আকারে পার্থক্য থাকে, তাকে বলে অ্যামব্লায়োপিয়া বা লেজি আই। জন্মগত ছানিও ক্ষীণ দৃষ্টির কারণ। অস্ত্রোপচার না হলে অন্ধ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সময়ের আগে জন্মানো শিশুও ক্ষীণ দৃষ্টিতে আক্রান্ত হতে পারে। এদের ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের সচেতন হওয়া উচিত।’’

চশমা বা লেন্সে সমস্যা না মিটলে দেখতে হবে, চোখে গঠনগত ত্রুটি আছে কি না। তা-ও না থাকলে অযথা সন্তানকে বকাঝকা না করে নিয়ে যেতে হবে চিকিৎসকের কাছে। অনেক অভিভাবক ভাবেন, শিশুর অন্যমনস্কতাই পিছিয়ে পড়ার কারণ। আসল রোগ ক্ষীণ দৃষ্টি।

চক্ষু চিকিৎসক শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘দু’টি চোখের পাওয়ারে তফাত হলে, দুই চোখের পাওয়ারই বেশি হলে, সিলিন্ড্রিক্যাল পাওয়ার, টেরা চোখ এবং স্টিমুলাস ডিপ্রাইভেশন অ্যামব্লায়োপিয়া অর্থাৎ, জন্মগত ছানি— এগুলিকেও বলা হয় অ্যামব্লায়োপিয়া।’’ এক সঙ্গে বেড়ে ওঠা দু’টি শিশু যেমন একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়, আবার তার ভিত্তিতে তাদের শিক্ষাও দ্রুত হয়। তেমনই চোখের দৃষ্টি পরিণত হওয়ার জন্য রয়েছে ‘বাইনোকুলার রাইভালরি সিস্টেম’। অ্যামব্লায়োপিয়া হলে সেই সিস্টেম নষ্ট হয়ে যায়। শৌভিকবাবুর মতে, ‘‘চিকিৎসা শুরু হওয়া উচিত আট বছরের মধ্যে। চোখের ব্যায়াম এবং সবল চোখটিকে ঢেকে রেখে অলস চোখকে খাটিয়ে তাকে সজীব করা হয়। এ জন্য নিয়মিত ক্লিনিকে যাতায়াত করতে হয়। জন্মগত ছানির ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার জরুরি।’’ চিকিৎসকদের মতে, ক্ষীণ দৃষ্টিতে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির বড় কারণ জন্মগত অপুষ্টি। বেশি বয়সে সন্তানধারণ এই অপুষ্টির জন্য দায়ী।

চিকিৎসকদের মতে, রেটিনার সমস্যা বা ‘লো ভিশন’-এর জন্য অস্ত্রোপচার বা ওষুধ নয়, প্রয়োজন ‘লো-ভিশন এড’। এটি এমন যন্ত্র, যা কোনও জিনিসকে চোখের সামনে বড় করে ধরে। কিন্তু ‘লো ভিশন’ বাচ্চাদের ব্লাইন্ড স্কুলে না ঠেলে সাধারণ স্কুলেই পাঠানো উচিত। সামনের বেঞ্চে বসানো এবং তাদের প্রতি সতর্ক নজর রাখলে সাধারণ বাচ্চার মতোই বাড়তে পারে ওরা।

স্কুল শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘সল্টলেকের একটি চোখের হাসপাতালের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা রয়েছে। সেখানে ক্ষীণ দৃষ্টির শিশুদের চোখ পরীক্ষা হয়। তার ভিত্তিতেই সাধারণ স্কুলে ভর্তি নেওয়া হয়। স্কুল থেকেই স্টুডেন্ট ডেটা ম্যানেজমেন্ট ইনফর্মেশন সিস্টেমের মাধ্যমে সেই পড়ুয়ার তথ্য সর্বশিক্ষা মিশনে চলে আসে। এর পরেই ছয় থেকে চোদ্দ বছর বয়সী শিশুদের ‘লো ভিশন এড’ দিয়ে সাহায্য করে দফতর।

যদিও সরকারি স্তরে সচেতনতার প্রসারে পিছিয়ে এ রাজ্য। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, ‘‘চোখ সংক্রান্ত কাজ করে কেন্দ্র। গ্রামে কিছু কাজ হলেও শহরে সে ভাবে প্রচার নেই। বছরে এক বার স্কুলগুলিতে চোখ পরীক্ষার শিবির হয়। কিন্তু লোকবল কম থাকায় সব স্কুলে হয় না।