মঙ্গলবার, ১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ডাইনোসরদের যুগে এসেছিল এক দানব কুমিরও!

News Sundarban.com :
সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৭
news-image

ওই দানবাকৃতির কুমিররা ‘রাজত্ব’ করত আজ থেকে প্রায় ১৭ কোটি বছর আগে, জুরাসিক যুগে। আধুনিক কুমিরের সঙ্গে এই কুমিরের ফারাকটা আকাশপাতাল। ওই কুমিরদের মাথার খুলির গঠন এবং চোয়ালে ধারালো দাঁতের সারি প্রাগৈতিহাসিক যুগের সবচেয়ে বড় মাংসাশী প্রাণী টিরানোসরাস রেক্সের কথা মনে করিয়ে দেয়। সম্প্রতি এমনই দানব কুমিরের একটি জীবাশ্মের হদিশ মিলেছে আফ্রিকার মাদাগাস্কারে। ওই প্রজাতির কুমিরের বৈজ্ঞানিক নাম- ‘রাজান্যানড্রনগোবে সাকালাভি’ ওরফে ‘রাজানা’।

ওই অতিকায় কুমিরের জীবাশ্মের গঠন পরীক্ষা করে ‘পির জে’ নামে একটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নালে গবেষকরা লিখেছেন, ‘রাজানা’ কুমিরেরই একটি বিশেষ প্রজাতি। তবে অনেক বেশি হিংস্র এবং তুখোড় শিকারি। প্রাগৈতিহাসিক যুগের তাবড় তাবড় মাংসাশী ডাইনোসরদের সঙ্গেই এরা গোটা পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াতো। হিংস্র ‘রাজানা’রা লম্বায় ছিল ২৩ ফুট। দেহের ওজন ১ হাজার ৭৬০ পাউন্ড থেকে ২ হাজার ২০০ পাউন্ডের মধ্যে। মানে, প্রায় হাজার কেজি’র কাছাকাছি। শক্ত পেশি, গভীর এবং সুবিশাল চোয়ালে ধারালো দু’সারি দাঁত দিয়ে নিমেষের মধ্যে শিকারের মাংস এমনকি, হাড় পর্যন্ত গুঁড়িয়ে ছাতু করে দেওয়ার করে ক্ষমতা রাখতো ওই দানব কুমির।

২০০৬ সালে প্রথম ওই প্রজাতির কুমিরের কিছু দাঁত ও হাড়ের টুকরো খুঁজে পান ইতালির জীবাশ্মবিদ সিমোনে ম্যাগানুকো, ক্রিশ্চিয়ানো ডাল স্যাসো এবং গিওভান্নি পাসিনি। সেগুলি পরীক্ষা করে তাঁদের ধারণা হয়েছিল, ‘রাজানা’রা আদতে ডাইনোসরেরই কোনও প্রজাতি। দীর্ঘ দিন এই প্রজাতির কুমিরদের নিয়ে গবেষণা চালান বিজ্ঞানীরা। হালে মাদাগাস্কারে ‘রাজানা’র সম্পূর্ণ জীবাশ্ম খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা। সেই জীবাশ্ম পরীক্ষা করেই ওই প্রজাতির কুমিরের নাক, চোয়াল, খুলি এবং হাড়ের গঠনটা বুঝতে পেরেছেন গবেষকরা। তাঁরা নিশ্চিত, ‘রাজানা’ আদতে ডাইনোসর নয়, কুমিরেরই ‘তুতো ভাই’।

জীবাশ্মবিদ ডাল স্যাসো জানিয়েছেন, শুধু শক্তিশালীই নয়, অসাধারণ বুদ্ধিও ছিল ওই অতিকায় প্রাণীর। শিকার ধরার সময় অদ্ভূত কৌশল নিত ‘রাজানা’রা। দৌড়ে শিকার ধরার বদলে আড়ালে থেকে শিকারের ওপর বেশ কিছু ক্ষণ ধরে নজরদারি চালাত। তার পর সঠিক সময়ে হঠাৎই শিকারের সামনে হাজির হয়ে তাকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়তো। গবেষকের মতে, শিকার ধরার এই কৌশল অনেকটা এখনকার হায়না এবং সিংহের মতো। তবে অন্যান্য কুমিরের মতো জলে এরা তেমন একটা স্বচ্ছন্দ ছিল না। শক্ত জমিতে শিকার ধরাই ছিল ওই অতিকায় প্রজাতির কুমিরদের বিশেষ পছন্দের।