হিংসাত্মক রাজনীতির পুনরুত্থানে শঙ্কিত চা বাগান মালিকরা

বহু ধরণের চা রয়েছে পৃথিবীতে, কিন্তু আঙুর থেকে তৈরি মদের মধ্যে যেমন শ্যাম্পেইনের আলাদা কৌলীন্য রয়েছে, চায়ের জগতে সেই মর্যাদা দার্জিলিং চায়ের।
পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলায় হিমালয়ের পাদদেশে ৮৭টি বাগানে এই বিশেষ জাতের চা হয়। স্কটিশ একজন চিকিৎসক এই চা গাছ নিয়ে এসেছিলেন দার্জিলিংয়ে। কোনো কোনো গাছের বয়স দেড়শ বছর হয়ে গেছে।
বছরে ৮০ লাখ কেজির মত দার্জিলিং চা উৎপাদিত হয়, যার অর্ধেকই বিদেশে রপ্তানি হয়। অধিকাংশই যায় ব্রিটেন এবং জাপানে। অল্প কিছু যায় ইউরোপের অন্য কয়েকটি দেশে।
বিশ্বের চায়ের বাজারে সবচেয়ে দামি এই দার্জিলিং চা। কোনো কোনো ব্র্যান্ডের দাম কেজি প্রতি ৮৫০ ডলার পর্যন্ত।
গাছগুলো বুড়িয়ে যাচ্ছে এই উদ্বেগের পাশাপাশি পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবিতে দার্জিলিং পাহাড়ে জুন মাস থেকে হিংসাত্মক রাজনীতির পুনরুত্থানে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন চা বাগান মালিকরা।
এক লক্ষ চা শ্রমিক তখন থেকে কাজ বন্ধ রেখেছে। ফলে উৎপাদন দারুণভাবে ব্যাহত হচেছ। বছরে যেখানে গড়ে ৮০ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়, এই ধর্মঘটের কারণে এ বছর তার মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ চা তৈরি হয়েছে।
দার্জিলিং চা বাগান মালিকদের সমিতির উপদেষ্টা সন্দীপ মুখার্জি বিবিসির সৌতিক বিশ্বাসকে বলেন, “এরকম সঙ্কটে এই চা শিল্প আগে কখনই পড়েনি। অনেক আগাম অর্ডার বাতিল করে দিতে হচ্ছে।”
মালিকরা ভয় পাচ্ছেন, সরবরাহ কমে গেলে এবং দাম আরো বাড়তে থাকলে দার্জিলিং চায়ের অনেক সমঝদার হয়তো অন্য কোনো চায়ের দিকে ঝুঁকবেন।
দার্জিলিং চায়ের উৎপাদন মৌসুম মার্চ থেকে অক্টোবর। জুন-জুলাই হচ্ছে মৌসুমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। দার্জিলিং চায়ের পাতায় একদম ভিন্নধর্মী যে সুগন্ধ তা তৈরি হয় গরমের এই সময়টাতে। পুরো মৌসুমের মধ্যে অর্ধেক চায়ের উৎপাদনই হয় এই দুই মাসে। ফলে ভরা মৌসুমে এ ধরণের ধর্মঘট বিপর্যস্ত করে ফেলেছে চায়ের বাগানগুলোকে।
পৃথক গোর্খাল্যান্ডের আন্দোলন চলছে ৮০’র দশক থেকে। কিন্তু এর আগে এই ধরণের শ্রমিক ধর্মঘটগুলো হতো চা মৌসুমের বাইরে। কিন্তু এবার শুরু হয়েছে ভরা মৌসুমেই।
চায়ের ক্রেতারা ইতিমধ্যেই সঙ্কটটি টের পাচ্ছেন। দোকানের তাকে দার্জিলিং চা দুষ্প্রাপ্য হয়ে যাচ্ছে।
জাপানের কয়েকটি সুপারমার্কেট বলছে নতুন সরবরাহ না এলে নভেম্বরের মধ্যে দার্জিলিং চায়ের মজুত শেষ হয়ে যাবে।
ধর্মঘটের কারণে দু মাস ধরে দার্জিলিংয়ের চা বাগানগুলোতে লোক নেই। আগাছায় ভরে গেছে। আগামীকালও যদি ধর্মঘট ভেঙ্গে কাজ শুরু হয়, তাহলেও নতুন উৎপাদন বাজারে আসতে অন্তত একমাস লাগবে।