উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা, এরপর কী ঘটতে চলেছে?

উত্তর কোরিয়ার সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে মুখোমুখি অবস্থানে থাকা পিয়ংইয়ং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে গেছে। সবার মনেই এখন প্রশ্ন, এরপর কী ঘটতে চলেছে?
গত দুই মাসে উত্তর কোরিয়া দুবার আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের (আইসিবিএম) সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন দ্বীপ গুয়ামে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকিও দিয়েছে দেশটি। এই পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ওয়াশিংটনের অস্ত্রও প্রস্তুত রয়েছে। তবে তাঁর প্রশাসন বারবার বলে এসেছে, উত্তর কোরিয়াকে নিরস্ত করতে সামরিক অভিযানের বিষয়টি ‘বিবেচনায় থাকা বিকল্পগুলোর একটি’।
গত মঙ্গলবার সাম্প্রতিকতম ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাটি চালায় পিয়ংইয়ং। অন্তর্বর্তী পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটি (আইআরবিএম) জাপানের হোক্কাইডো দ্বীপের ওপর দিয়ে উড়ে প্রশান্ত মহাসাগরে গিয়ে পড়ে। এরপর গত বুধবার উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনকে উদ্ধৃত করে দেশটির সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ বলে, গুয়ামে সামরিক অভিযানের এটা ছিল প্রথম পদক্ষেপ।
উত্তর কোরিয়ার এই হুমকি বিবেচনায় নিয়ে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এরপর হয়তো জাপানের ওপর দিয়ে পিয়ংইয়ং একসঙ্গে কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়বে। মঙ্গলবারের ক্ষেপণাস্ত্রটি ২ হাজার ৭০০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে মহাসাগরে পড়ে। নিজের সক্ষমতার প্রমাণ দিতে উত্তর কোরিয়া হয়তো এরপর আরও বেশি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করতে পারে। এখানে উল্লেখ্য, উত্তর কোরিয়া থেকে প্রায় ৩ হাজার ৪০০ কিলোমিটার দূরে গুয়াম দ্বীপ অবস্থিত।
বিশ্লেষকেরা আরও বলছেন, মঙ্গলবার উৎক্ষেপণ করা ক্ষেপণাস্ত্রটির গতিপথ সযত্নে পছন্দ করা হয়ে থাকতে পারে। হোক্কাইডোর ওপর দিয়ে উড়ে গেলেও গুয়ামের আশপাশের কোথাও গিয়ে পড়েনি এটি।
উত্তর কোরিয়ার এমন আচরণের কারণে বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ দেশটিতে সামরিক অভিযান চালানোর পক্ষে কথা বলছেন। কিন্তু অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের মতে, অন্তত এই মুহূর্তের জন্য সামরিক হস্তক্ষেপ অসম্ভব।
তবে ট্রাম্পের সাবেক প্রধান কৌশলবিদ স্টিভ ব্যানন ত্রৈমাসিক সাময়িকী দ্য আমেরিকান প্রসপেক্টাস এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, সামরিক পদক্ষেপের মাধ্যমে চলমান সংকট নিরসন সম্ভব নয়।
এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কি আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে উত্তর কোরিয়াকে নিরস্ত করা হবে?
জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ায় গত আগস্ট মাসে উত্তর কোরিয়ার ওপর সপ্তমবারের মতো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বিশ্ব সংস্থাটির নিরাপত্তা পরিষদ। এবারের নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে পিয়ংইয়ংয়ের কয়লা, লোহা, সিসা, মাছ ও সামুদ্রিক খাদ্যপণ্য। পিয়ংইয়ংয়ের মিত্র বলে পরিচিত বেইজিং ও মস্কোও ওই নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে একমত হয়েছে। তবে এর প্রয়োগ অনেকটাই নির্ভর করছে চীনের ওপর। কারণ পিয়ংইয়ংয়ের ৯০ শতাংশ বাণিজ্যই বেইজিংয়ের সঙ্গে।
উত্তর কোরিয়া গত মঙ্গলবার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানোর পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টুইট করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ২৫ বছর ধরেই উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনা করে যাচ্ছে। আলোচনায় কোনো সমাধান হতে পারে না।
কিন্তু এর কিছু পরই মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস সাংবাদিকদের বলেন, কূটনৈতিক সমাধান অসম্ভব নয়। আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন তো বারবারই বলে এসেছেন, পিয়ংইয়ংকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।